মাছের ক্ষতরোগের ইতিহাস: বাংলাদেশে ১৯৮৮ সালে সর্বপ্রথম মাছের ক্ষতরোগ সনাক্ত করা হয়। অস্ট্রেলিয়ায় এরও আগে ১৯৭২ সালে এ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। এভাবে পর্যায়ক্রমে নিউগিনি, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, কম্পুচিয়া, লাওস, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, শ্রীলংকা হয়ে বাংলাদেশে এ রোগ বিস্তার লাভ করে।
আক্রমণের সময়: শীতের শুরুতেই সাধারণত এ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। এ সময়ে পুকুরের পানি কমে যাওয়ার কারণে ক্ষতরোগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
আক্রান্ত মাছের প্রজাতি: বাংলাদেশে প্রায় ৩২ প্রজাতির স্বাদু পানির মাছ এ রোগ হয়। যেমন: টাকি, শোল, পুঁটি, বাইম, কই, শিং, মৃগেল, কাতলসহ বিভিন্ন কার্প জাতীয় মাছে এ রোগ হয়।
রোগের কারণ: এ রোগের মূল কারণ এ্যাফানোমাইসিস ইনভাডেনস্ নামক ছত্রাক। পানির গুনাগুনের অবনতি ঘটলে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।
- হঠাৎ তাপমাত্রার কমতি (১৯০ সে: এর কম)
- পি.এইচ এর কমতি (৪-৬)
- এ্যালকালিনিটির কমতি (৪৫-৭৪ পিপিএম)
- হার্ডনেসের কমতি (৫০-৮০ পিপিএম)
- ক্লোরাইডের স্বল্পতা (৩-৬ পিপিএম)
রোগের লক্ষণ:
- প্রথমে মাছের গায়ে ছোট ছোট লাল দাগ দেখা যায়।
- লাল দাগে ঘা ও ক্ষত হয়।
- ক্ষতে চাপ দিলে দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজ বের হয়।
- লেজের অংশ খসে পড়ে।
- মাছের চোখ নষ্ট হতে পারে।
- মাছ ভারসাম্যহীনভাবে পানির ওপরে ভেসে থাকে।
- মাছ খাদ্য খায় না।
- আক্রান্ত মাছ ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে মারা যায়।
প্রতিকার:
- জলাশয়ের সুস্থ ও স্বাভাবিক দূষণমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখাই হবে এ রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা।
- শীতের শুরুতে ১৫ থেকে ২০ দিন অন্তর অন্তর পুকুরে প্রতি শতাংশে আধা কেজি ডলোচুন ও আধা কেজি লবণ মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
- পুকুর আগাছামুক্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
- জৈবসার প্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে।
- জলাশয়ের পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখতে হবে।
- মাছের ঘনত্ব কম রাখতে হবে।
ক্ষতরোগ হওয়ার আগে এসব ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রতিরোধ: ক্ষতরোগ একবার চলে এলে বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করেও আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় না। রোগের বিভিন্ন জীবাণু যেমন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, প্যারাসাইট ও ছত্রাক ক্ষতের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করে রোগটিকে জটিল করে তোলে। তবুও যেসব পদ্ধতি নেয়া যায় তা নিম্নরূপ-
- নিমবীজ গুঁড়া করে পুকুরে প্রয়োগ করা (শতাংশে ১ কেজি)।
- ২-৪ পিপিএম (মি.গ্রাম/লি.) পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দ্রবণে আক্রান্ত মাছকে ১ মিনিট গোসল
- ডিমওয়ালা মাছকে পুকুরের কোনার স্বল্পপরিসরে নিয়ে এসে জালের মধ্যে মাছগুলোকে ০.৫ পিপিএম পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দ্বারা ধোয়া। এভাবে পর পর তিন-চার দিন করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
- ১২৫ পিপিএম (মি.গ্রাম/লি.) ফরমালিন দ্রবণে মাছকে গোসল করানো।
- পুকুরে ১ পিপিএম (মি.গ্রাম/লি.) হারে পটাশ প্রয়োগ করা যেতে পারে।
- শতাংশে ৫০০ গ্রাম চুন + ৫০০ গ্রাম লবন।
সতর্কতা: আগাম সতর্কতামূলক কিছু ব্যবস্থা নিলে পুকুরে এ রোগ সংক্রমনের শঙ্কা অনেকটা কমে যায়। শীত শুরুর আগে পুকুরে যখন আস্তে আস্তে পানির পরিমাণ কমতে থাকে তখন বিশেষ করে আশ্বিন-কার্তিক মাসে শতাংশে আধা কেজি হারে চুন ও লবন ক্ষতরোগের আক্রমণ থেকে নিশ্চিত অব্যাহতি পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে আরো বিস্তারিত জানতে হলে আপনার পাশের উপজেলা মৎস্য অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন।
Leave a Reply