চুন প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা
- জলজ পরিবেশ যেমন পানি ও মাটির পিএইচ কে উপযুক্ত মাত্রায় আনয়নের মাধ্যমে পানির গুনাগুন বৃদ্ধি করে যা অধিক ও দ্রুত মাছ উৎপাদনের সহায়ক।
- পানিতে বিদ্যমান রোগ জীবানু ধ্বংস করে।
- পানির ঘোলাত্ব দূর করে।
- সারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
- মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- অতিরিক্ত শ্যাওলা নিয়ন্ত্রণ করে।
- মাছের আঁইশ ও কাটা শক্ত করে।
চুনের প্রকারভেদ
- পাথরে চুন – CaCO3
- কলি চুন – Ca(OH)2
- পোড়া চুন – CaO
- জিপসাম – CaSO4.2H2O
সবধরনের চুন বাজারে সহজেই পাওয়া যায়। পোড়া চুন ও কলি চুন শুকনো পুকুরে ব্যবহার করা নিরাপদ।
চুনের প্রয়োগের মাত্রা (পুকুর প্রস্তুতিকালীন)
চুন প্রয়োগের মাত্রা নির্ভর করে মাটির পিএইচ এবং চুনের ধরণের উপর। পোড়া চুনের মাত্রা পাথুরে চুনের দ্বিগুন ও কলিচুনের দেড় গুন। চুন ব্যবহারের পূর্বে মাটির পিএইচ পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত।
আপনার নিকটস্থ উপজেলা মৎস্য দপ্তর থেকে পিএইচ পরীক্ষা করে নিন।
পিএইচ | পোড়া চুন (প্রতি শতাংশে) |
৩-৫ | ৬ কেজি |
৫-৬ (এঁটেল মাটি) | ৪ কেজি |
৬-৭ (দো-আঁশ মাটি) | ১-২ কেজি |
মাটির ধরন অনুযায়ি নতুন পুকুর ও পুরাতন পুকুরের মধ্যে পোড়া চুনের প্রতি শতাংশে প্রয়োগ মাত্রা নিম্নরুপ হবে:
মাটির ধরন | নতুন পুকুর | পুরাতন পুকুর |
দো-আঁশ | ১ কেজি | ২ কেজি |
এঁটেল | ৪ কেজি | ৬ কেজি |
চুনের ব্যবহার পদ্ধতি
শুকনা ও ভেজা মাটির পুকুরের ক্ষেত্রে পুকুর তৈরির সময় প্রয়োজনীয় চুন একটি বস্তার মধ্যে ভাল করে গুঁড়া করে অথবা মাটির চাড়ি বা এ্যালুমিনিয়ামের পাত্রে গুলে পাড়সহ সমস্ত পুকুরে সমানভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে।
পানি ভর্তি পুকুরের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় চুন মাটির চাড়ি, টিনের বালতি বা ড্রামে গুলিয়ে পাড়সহ সমস্ত পুকুরে সমানভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে। কড়া রোদে চুন বেশি কার্যকর।
চুন প্রয়োগের সময়
- শুকনা পুকুরে চাষ দেয়ার দিন।
- পুকুরে পানি সেচের পর পরই ভেজা মাটিতে।
- পানি ভর্তি পুকুরে সার প্রয়োগের ৬-৭ দিন পূর্বে।
- চাষকালীন সময়ে প্রতিমাসে অন্তত একবার চুন ব্যবহার করা যেতে পারে।
- চাষকালীন সময়ে প্রতি শতাংশে ২০০ গ্রাম চুন ব্যবহার করা যেতে পারে (তবে এটি নির্ভর করবে পুকুরের মাটি ও পানির পিএইচের মানের উপর)।
আপনার নিকটস্থ উপজেলা মৎস্য দপ্তর থেকে পিএইচ পরীক্ষা করে নিন।
চুন প্রয়োগে সতর্কতা
- চুন গুলানো ও ছিটানোর সময় নাক-মুখ গামছা দিয়ে বাঁধতে হবে।
- কোন অবস্থাতেই প্লাস্টিকের পাত্রে চুন গুলানো যাবে না।
- চুনের পাত্রে পানি ঢালার পূর্বে পাত্রের মুখ অবশ্যই চট/বস্তা দিয়ে ঢাকতে হবে।
- পাত্রে চুন রেখে তারপর পানি ঢালতে হবে। চুন ব্যবহারের পূর্বের দিন সন্ধ্যায় চুনে পানি দিয়ে রাখতে হবে এবং পরদিন সকালে রৌদ্রোজ্জল সময়ে ব্যবহার করতে হবে।
চুন প্রয়োগে সতর্কতা
- পুকুরে মাছ থাকা অবস্থায় চুন গুলানোর ২দিন পর পুকুরে চুন প্রয়োগ করতে হবে।
- রৌদ্রোজ্জল দিনে চুন প্রয়োগ করতে হবে।
- বাতাসের অনুকূলে চুন ছিটাতে হবে।
- মেঘলা ও বৃষ্টির দিনে চুন ব্যবহার করা যাবে না।
- চোখে চুন লাগলে সাথে সাথে তা পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
*** বিস্তারিত জানার জন্য আপনার নিকটস্থ উপজেলা মৎস্য দপ্তরে যোগাযোগ করুন।
Leave a Reply