• Home
মৎস্যচাষি স্কুল
মৎস্যচাষি স্কুল
  • Home
  • Follow
    • Facebook
Home
মাছচাষের বিশেষ কৌশল

পেনে মাছচাষ

পেনে মাছ চাষ

  • কোন উন্মুক্ত জলাশয়ে এক বা একাধিক দিক বাঁশের বানা, বেড়া, জাল বা অন্য কোন উপকরণ দিয়ে ঘিরে উক্ত জলাশয়ে মাছ মজুদ করে চাষ করাকে পেনে মাছ চাষ বলে।
  • পেন পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরনের খাল, মরা নদী, হাওড়, বাওড়, বন্যা প্লাবিত জলাভূমিতে গ্রামীন জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে মাছের উৎপাদন বাড়ানোসহ বেকারত্ব দূর করা সম্ভব।
  • পেনে মাছ চাষের বৈশিষ্ট্য হলো পেনের ঘের বা বেড়া জলাশয়ের তলায় প্রোথিত থাকে এবং পেনের পানির সাথে বাইরের পানির সংযোগ বা প্রবাহ বিদ্যমান থাকে।

পেনে মাছ চাষের উদ্দেশ্য ও সুবিধা

  • বৎসরে ৬-৮ মাস পানি থাকে এমন মৌসুমী জলাশয় যেমন – সেচ প্রকল্পের খাল, সংযোগ খাল, মরা নদ-নদী, নদ-নদীর খাড়ী অঞ্চল মাছ চাষের আওতায় আনা।
  • গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বেকার সমস্যা দূর করা ও অধিক আমিষ উৎপাদন।
  • যে সমস্ত জলাশয়ে একাধিক মালিকানা আছে সে সমস্থ জলাশয়ে একাধিক মৎস চাষী নিজেদের পছন্দমত মাছ চাষ করতে পারে।
  • সরকারী মালিকানাধীন যে সমস্ত জলাশয়ে মাছ চাষ করা সম্ভব নয় সে সমস্ত জলাশয়ে পেন তৈরী করে ছোট ছোট ইউনিটে মাছ চাষ করে মাছের অধিক উৎপাদন সম্ভব।
  • প্রয়োজনবোধে অল্প সময়ে পেন এক স্থান হতে অন্যস্থানে স্থানান্তর ও তৈরী করা যায়।
  • প্রয়োজনে যে কোন সময়ে সামান্য শ্রম ও কম খরচে পেনের মাছ ধরা সম্ভব।
  • জলাশয়ে বহুবিধ ব্যবহার যেমন কৃষি, সেচ ইত্যাদির কোন অসুবিধা না করেই মাছ চাষ সম্ভব।

 

স্থান নির্বাচন

  • পেনে লাভজনকভাবে মাছ চাষের জন্য স্থান নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • যেসব বৃহৎ জলাশয়ে সাধারনভাবে নিবিড় চাষের আওতায় আনা সম্ভব নয় সে সব জলাশয় পেনে মাছ চাষের জন্য নির্বাচন করা যেতে পারে।
  • তবে যে সমস্ত জলাশয়ের তলদেশ অত্যন্ত অসমান, বালি বা পাথর দ্বারা আবৃত, প্রবল স্রোত বিদ্যমান, পানি দূষণসহ ঝড়ো হাওয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে, সে সমস্ত স্থান বাদ দিয়ে উম্মুক্ত জলাশয়ের যে কোন স্থানে পেন তৈরী করা যেতে পারে।

 

পেন তৈরী

  • বাঁশ, গাছের ডাল, নানা উপকরণ দিয়ে তৈরী বেড়া কিংবা জাল দিয়ে পেন তৈরী করা যায়।
  • জলাশয়ের প্রস্থ কম হলে এক পাশ থেকে আরেক পাশ পর্যন্ত আড়াআড়ি ভাবে খুটি পুঁতে বেড়া দিয়ে পেন তৈরী করা হয়।
  • জাল দিয়ে বেড়া দেয়ার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন জালের ফাঁস ১০ মিঃমিঃ এর চেয়ে বেশি না হয়। টায়ারকর্ড জাল বা নটলেস জাল ব্যবহার করা প্রয়োজন।
  • ০.৫-৫ হেক্টর আয়তনের পেন মাছ চাষ ও ব্যবস্থাপনার দিক থেকে সবচেয়ে ভাল।
  • যে সমস্ত এলাকায় পানি প্রবাহ বেশি সে সব এলাকার তলদেশে বাঁশ দ্বারা ৩ মিটার উঁচু বানা তৈরী করে তলদেশের মাটির মধ্যে অর্ধেক বানা পুঁতে দিতে হবে যাতে চাপে তলদেশের বালি বা নরম মাটি সরে না যায়।
  • মহাল, বন বা বরাক বাঁশের বেড়া/বানা সাধারণত ১-২ বৎসর ব্যবহার করা যায়। আবার টায়ারকর্ড জালের আয়ুষ্কাল ২-৩ বৎসর। বানা তৈরীর জন্য ব্যবহৃত নারকেলের কয়ের ও সিনথেটিক রশি ১-২ বৎসর টিকে থাকে। এ ছাড়া বেড়া বাধাঁর জন্য ব্যবহৃত জিআই তারের আয়ুষ্কাল ১-২ বৎসর।

 

রাক্ষুসে ও অবাঞ্চিত মাছ দমন

  • পেন তৈরীর পর জাল টেনে যতদূর সম্ভব রাক্ষুসে মাছ (শোল, গজার, আইড়, টাকি, ফলি ইত্যাদি) এবং অবাঞ্চিত মাছ (বেলে, পুঁটি, দাড়কিনা, মলা, চাপিলা, চান্দা ইত্যাদি) সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা নিতে হবে।
  • এছাড়া জলজ আগাছা সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে ফেলতে হবে।
  • পানির প্রবাহসহ বাহিরের পানির সাথে সংযোগ থাকার দরুন রোটেনন প্রয়োগে রাক্ষুসে এবং অবাঞ্চিত মাছ দমন খুব বেশি কার্যকর হয়না বিধায় জাল টেনে রাক্ষুসে ও অবাঞ্চিত মাছ এবং আগাছা দমন করতে হয়।

 

প্রজাতি নির্বাচন

  • বিভিন্ন প্রজাতির এমন সব মাছ ছাড়তে হবে যারা পানির সকল স্তরের খাবার খায়, যাদের খাদ্য শিকল সংক্ষিপ্ত, যাদের পোনা সহজে সংগ্রহ করা যায়।
  • রুই, কাতল, মৃগেল, সিলভার কার্প, বিগহেড কার্প, গ্রাসকার্প, রাজপুঁটি, তেলাপিয়া, কার্পিও, থাই পাঙ্গাস প্রজাতির মাছ পেনে চাষ করার জন্য অত্যন্ত উপযোগী। তাছাড়া পেনে গলদা চিংড়ি চাষ করা সম্ভব।

 

পোনা মজুদের হার

  • অধিক ফলনের জন্য সুস্থ ও সবল পোনা নির্দিষ্ট হারে মজুদ করা প্রয়োজন। পোনা মজুদের সময় পোনার আকার কোনক্রমেই ৪ ইঞ্চির কম যেন না হয়। কারন ছোট পোনা পেনের বেড়া দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • এ ছাড়াও যেহেতু পেন থেকে অবাঞ্চিত ও রাক্ষুসে মাছ সম্পুর্ণরুপে সরিয়ে ফেলা অনেক সময় সম্ভব হয়না, তাই ছোট পোনা মজুদ করলে রাক্ষুসে মাছ ছোট পোনাকে খেয়ে ফেলবে।
  • একরে ৪ হাজার পোনা মজুদ করা যেতে পারে।
  • রুই, মৃগেল, কাতলা, সিলভার কার্প ও কার্পিও যথাক্রমে ৩০:২০:১০:১০:৩০ হারে মজুদ করা যেতে পারে।

পেনে খাদ্য সরবরাহ

  • মোট মজুদকৃত মাছের ওজনের ১% হারে সহজলভ্য খাদ্য যথাঃ খৈল, কুঁড়া, ভূষি, আটা, চিটাগুড় ইত্যাদি মিশ্রিত করে ভেজা অবস্থায় দৈনিক প্রয়োগ করতে হবে।
  • সম্পূরক খাদ্যের অনুপাত যথাক্রমে খৈল ৫০%, কুঁড়া ৩০%, গমের ভূষি ১৫%, আটা ৩% এবং চিটাগুড় ২% হলে ভাল হয়।
  • পেনে জাল টেনে মাসে কমপক্ষে একবার মাছের বৃদ্ধি ও রোগ বালাই পর্যবেক্ষন করা আবশ্যক।

 

ব্যবস্থাপনা

  • মাছের কোন প্রকার রোগ বা দৈহিক বৃদ্ধির সমস্যা দেখা দিলে তা প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে হবে।
  • পেনের বেড়া বা জালে কোন রূপ ক্ষতি হয়েছে কিনা সে বিষয়ে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে।
  • অনেক সময় পেনের বেড়া ও জালে ময়লা-আবর্জনা জমে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এরূপ অবস্থার সৃষ্টি হলে বেড়া ও জাল পরিষ্কার করা না হলে পানির চাপে জাল ছিড়ে যেতে পারে ও বেড়া ভেঙ্গে যেতে পারে।
  • মাছ রক্ষণাবেক্ষণ, সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ ও পেন পরিচর্যার জন্য সার্বক্ষণিকভাবে পেন সংলগ্ন এলাকায় লোক পাহারা থাকা আবশ্যক।

 

রোগ-বালাই ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়

  • মুক্ত জলাশয়ে সাধারণত মাছের কোন রোগ-বালাই দেখা যায় না। তবে শীতকালে পেনের পানির গভীরতা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসলে মাছে রোগ-বালাইয়ের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে।
  • পেনে মাছ চাষ সাধারণত ৬ থেকে ৮ মাসব্যাপী হয়ে থাকে এবং শীতকালে অর্থাৎ নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে সমুদয় মাছ আহরন করা হয়। তাই রোগ-বলাই এর আক্রমন সেখানে পরিলক্ষিত হয় না।
  • ঝড় এবং অতি বৃষ্টির দরুণ পেনের ক্ষতি হতে পারে। ঝড়ে পেন ভেঙ্গে যাওয়া সহ বন্যায় মাছ বের হয়ে যেতে পারে।

 

আহরন ও উৎপাদন

  • পেনে মাছ চাষের উদ্দেশ্য হলো অল্প সময়ের মধ্যে বিক্রয়যোগ্য মাছ উৎপাদন করা। পেনে ৬-৭ মাসের মধ্যে বাজারের চাহিদামত বিক্রয়যোগ্য মাছ উৎপাদিত হয়। পেনে ৬-৭ মাস পরেই টানা জাল ব্যবহার করে মাছ ধরা যেতে পারে।
  • মৎস্য গবেষনা ইনষ্টিটিউট, চাঁদপুর পেনে মাছ চাষ প্রকল্পে পরীক্ষামূলকভাবে মাছ চাষ করে ৬ মাসে প্রতি হেক্টরে ৩.০ – ৩.৫ টন মাছ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে।
  • উক্ত পেনে কাতলা, কার্পিও ও সিলভার কার্পের গড় ওজন যথাক্রমে ১০১০, ৯০০ ও ৫৫০ গ্রাম এবং রুই ও মৃগেল যথাক্রমে ৩১০ ও ৩৫০ গ্রাম। এরূপ ফলাফল অবশ্যই উৎসাহব্যঞ্জক।

*** বিস্তারিত জানার জন্য আপনার নিকটস্থ উপজেলা মৎস্য দপ্তরে যোগাযোগ করুন।

Facebook Twitter Google+ LinkedIn Pinterest
Next article ধানক্ষেতে মাছ চাষ পদ্ধতি
Previous article খাঁচায় মাছচাষ

Related Posts

ধানক্ষেতে মাছ চাষ পদ্ধতি

জমির ধরণ অনুযায়ী সাধারণত ২ পদ্ধতিতে...

খাঁচায় মাছচাষ

খাঁচায় মাছ চাষের সুবিধা মুক্ত জলাশয়ের...

Leave a Reply Cancel reply

মাছচাষ বিষয়ক পরামর্শ খোঁজ করুন

সাম্প্রতিক পরামর্শ

  • উদ্ভাবক পরিচিতি
  • বাগদা চিংড়ির রোগ ও রোগ ব্যবস্থাপনা
  • গলদা চিংড়ির রোগ ও রোগ ব্যবস্থাপনা
  • আরগুলোসিস (মাছের উকুন)
  • মাছের ফুলকা পঁচা রোগ
  • ড্রপসি (পেট ফোলা রোগ)
  • মাছের লেজ ও পাখনা পচা রোগ
  • ধানি পোনার চাষ
  • রেনু পোনার চাষ
  • যুব কর্মসংস্থানে মৎস্য ঋণ
  • চাষের পুকুরে মলা ও পুঁটি মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন
  • পাবদা ও গুলশা মাছের প্রণোদিত প্রজনন ও পোনা উৎপাদন কৌশল
  • দেশী সরপুঁটি মাছের প্রণোদিত প্রজনন ও পোনা উৎপাদন কৌশল
  • বাটা মাছের প্রণোদিত প্রজনন ও পোনা উৎপাদন কৌশল
  • শিং মাছের প্রজনন ও পোনা উৎপাদন কৌশল
  • মাগুর মাছের প্রজনন ও পোনা উৎপাদন কৌশল
  • কৈ মাছের প্রজনন ও পোনা উৎপাদন কৌশল
  • ক্ষত রোগ
  • পুকুরে মুক্তা চাষ
  • কুচিয়া চাষ
  • কাঁকড়া চাষ
  • ধানক্ষেতে মাছ চাষ পদ্ধতি
  • পেনে মাছচাষ
  • খাঁচায় মাছচাষ
  • থাই সরপুঁটির চাষ
  • আধুনিক পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি চাষ
  • আধুনিক পদ্ধতিতে পাবদা মাছের চাষ
  • শোল মাছ চাষ
  • আধুনিক পদ্ধতিতে মলা মাছের চাষ
  • পুকুরে কৈ মাছের একক চাষ
  • কার্প জাতীয় মাছের মিশ্রচাষ
  • পুকুরে পাঙ্গাস মাছের চাষ
  • পুকুরে শিং ও মাগুর মাছ চাষের উন্নত কলাকৌশল
  • মনোসেক্স তেলাপিয়ার একক চাষ পদ্ধতি
  • Good Aquaculture Practice (GAP) [উত্তম মৎস্যচাষ অনুশীলন]
  • মাছ চাষে একোয়ামেডিসিন
  • মাছ চাষের জন্য বারো মাসে জরুরী করণীয়
  • পুকুরে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য পরীক্ষা
  • পুকুরে নিয়মিত সার প্রয়োগ
  • পুকুরে নিয়মিত খাদ্য প্রয়োগ
  • ভালো পোনামাছ চেনার উপায় ও পুকুরে পোনামাছ অবমুক্তকরণ
  • পোনা মাছ পরিবহন
  • মাছ চাষের জন্য পুকুর ব্যবস্থাপনা
  • পুকুরে চুন প্রয়োগ
  • রাক্ষুসে ও অবাঞ্চিত মাছ/প্রাণী দূরীকরণ
  • নতুন পুকুর খনন পদ্ধতি
  • Home
  • Back to top