আমাদের দেশে বর্তমানে আধুনিক পদ্ধতিতে অক্সিজেন ব্যাগে কার্পজাতীয় মাছের রেণু ও চিংড়ির পিএল এবং সনাতন পদ্ধতিতে ড্রাম বা এ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়িতে চিংড়ির জুভেনাইল ও মাছের চারা পোনা পরিবহন করা হয়ে থাকে। সাধারণভাবে ৩৬ ইঞ্চি x ২০ ইঞ্চি আকারের অক্সিজেন ব্যাগ পিএল বা পোনা পরিবহনে ব্যবহৃত হয়।
পোনা পরিবহন ঘনত্ব
পরিবহন পদ্ধতি | আকার (সে.মি.) | ঘনত্ব/লিটার পানি | সময় |
অক্সিজেন ব্যাগ | পিএল | ২৫০-৩০০টি | ১২ ঘন্টা |
জুভেনাইল | ১০০-১৫০টি | ৬ ঘন্টা | |
পাতিল/ড্রাম | জুভেনাইল | ১৫-২০টি | ৪-৬ ঘন্টা |
অক্সিজেন ব্যাগ | কার্প জাতীয় | ২৫-৩০টি | ৪-৬ ঘন্টা |
পাতিল/ড্রাম | কার্প জাতীয় | ১৫-২০টি | ৪-৬ ঘন্টা |
পোনা পরিবহন নীতিমালা
- ১২ ঘন্টা পূর্বে পোনার খাদ্য প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে
- সকালে বা বিকালে পরিবহন
- যাত্রাপথে পাতিল/ড্রামের পানি পরিবর্তন করা
- যাত্রাপথে যাত্রাবিরতি হলে ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হবে
- একটি ব্যাগে/পাত্রে একই আকার ও প্রজাতির পোনা দিতে হবে
- পোনা পরিবহনের পূর্বে হাপাতে ১-২ ঘন্টা রাখতে হবে
- অধিক ঘনত্বে পোনা পরিবহন করা যাবে না
- পরিবহনের জন্য বড় এ্যালুমিনিয়াম বা টিনের পাতিল বা ড্রাম ব্যবহার করা যেতে পারে
- ময়লামুক্ত পরিষ্কার ঠান্ডা পানিতে পরিবহন করতে হবে
- পাতিলের পানিতে অক্সিজেনের ঘাটতি যেন না ঘটে এজন্য পরিবহনের সময় পানি নেড়ে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হবে
অ্যালুমিনিয়াম হাঁড়িতে ডিমপোনা পরিবহন
- সাধারণত ৩০-৩৫ লিটার পানি ধরে এমন হাঁড়িতে প্রায় ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার ডিমপোনা পরিবহন করা যেতে পারে।
- ডিমপোনা সংগ্রহের স্থানের পানি অর্ধেক বা তার চেয়ে একটু বেশি ভর্তি করে ৫০-৬০ গ্রাম লাল মাটি মিশিয়ে দিয়ে ডিমপোনা পরিবহন করা হয়।
- হাঁড়ির মুখে একটা গামছা থাকে এবং গামছার মধ্যে দিয়ে হাত ঢুকিয়ে পানি নাড়াতে হয়, যাতে পানির সঙ্গে অক্সিজেন মিশতে পারে।
অক্সিজেনযুক্ত পলিথিন ব্যাগে ডিমপোনা পরিবহন
- বিশেষ ধরনের পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করা হয় (০.০৬ মিমি পুরু এবং ৮২ সে.মি. দৈর্ঘ্য ও ৬০ সে.মি. প্রস্থ বিশিষ্ট)। এই ব্যাগটির ১/৩ থেকে ১/২ অংশ পরিষ্কার পানি ভর্তি করা হয়।
- একটা ১৫-১৬ কেজি তরল পদার্থ ধরে এ রকম খালি টিনের মধ্যে জনপূর্ণ পলিথিন ব্যাগটিকে বসানো হয়।
- সাধারণত প্রতি ব্যাগে ২৫ হাজারের মত ডিমপোনা ভর্তি করা হয়।
- অক্সিজেন সিলিন্ডারের চাবি খুলে সরু রবার টিউবের মধ্যে দিয়ে ব্যাগে অক্সিজেন ভর্তি করা হয়।
অক্সিজেনযুক্ত পলিথিন ব্যাগে ডিমপোনা পরিবহন
অন্যান্য পদ্ধতি
ইনসুলেটেড ট্যাংকে এরেটরের সাহায্যে অক্সিজেন সরবরাহের মাধ্যমে পোনা পরিবহন করা যায়।
ক্যানভাস ট্যাংকের মাধ্যমে পিক-আপ বা অন্য কোন গাড়ী ব্যবহার করে এরেটর সেট করে পোনা পরিবহন করা যায়।
আজকাল ভ্যান গাড়ীতে মোটা পলিথিন কাগজ নিয়ে ক্যানভাস ট্যাংক তৈরি করেও পোনা পরিবহন করতে দেখা যায়।
রেনু পরিবহন
- হ্যাচারি থেকে অক্সিজেন ব্যাগেই রেণু পরিবহন করা উচিত। এতে রেণু মৃত্যুর সম্ভাবনা কম থাকে।
- ৬০ x ৪০ সে.মি. পলিথিন ব্যাগে ৮-১০ ঘন্টা দূরত্বে ১২৫ গ্রামের বেশি রেণু পরিবহন করা উচিত নয়।
- রেণু পরিবহনের নির্ভরযোগ্য পরিমাণ ৩-৫ গ্রাম/লিটার পানি।
পোনা পরিবহণে সতর্কতা
- একটি পাতিলে বা ড্রামে/ট্যাংকে/ব্যাগে একই আকারের পোনা পরিবহন করা উচিত।
- পোনা পরিবহন করার আগে পোনাকে পেট খালি করে কণ্ডিশনিং করে নিতে হবে।
- দুর্বল পোনা পরিবহন করা যাবে না।
- পরিবহনকালে সরাসরি নলকুপের পানি ব্যাগে/ পাতিলে/ ড্রামে/ ট্যাংকে দেয়া উচিত নয়। এতে পোনা মারা যেতে পারে।
পোনা পরিবহণে সতর্কতা
- প্রয়োজন হলে একই তাপমাত্রার ভাল পানি দিয়ে ব্যাগের বা পরিবহন পাত্রের পানি বদলানো যেতে পারে।
- শিং ও মাগুর মাছের পোনা ড্রাম/পাতিলে পরিবহনকালে পেটের দিক থেকে ঘষা খেয়ে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। তাই এগুলোকে ব্যাগে পরিবহন করাই ভাল। ব্যাগে পরিবহন করে পোনাকে অবশ্যই শোধন করে পুকুরে ছাড়তে হবে এবং কম পরিমাণ পোনা এক সাথে পরিবহন করতে হবে।
- লোহার/প্লেনসিটের ড্রামের পরিবর্তে প্লাষ্টিক ড্রামে পোনা পরিবহন করাই ভাল। তাতে ক্ষতি কম হয়।
*** বিস্তারিত জানার জন্য আপনার নিকটস্থ উপজেলা মৎস্য দপ্তরে যোগাযোগ করুন।
Leave a Reply