পুকুরের প্রকারভেদ
যে বৈশিষ্টের উপর ভিত্তি করে শ্রেণীবিভাগ | পুকুরের প্রকার | বৈশিষ্ট্য |
পুকুরে পানি ধারণের স্থায়িত্বকালের উপর ভিত্তি করে | বাৎসরিক পুকুর | • সারা বছর পানি থাকে
• পানির গভীরতা ৪-৯ ফুট |
মৌসুমি পুকুর | • ৫-৭ মাস পানি থাকে
• পানির গভীরতা ২-৭ ফুট |
যে বৈশিষ্টের উপর ভিত্তি করে শ্রেণীবিভাগ | পুকুরের প্রকার | বৈশিষ্ট্য |
মাছ চাষের ধরণের উপর ভিত্তি করে | আতুর পুকুর | • ১০-২৫ শতাংশ, গভীরতা ৩-৪ ফুট
• ৪-৫ দিন বয়সী রেণু ছেড়ে ১৫-২০ দিন প্রতিপালন |
চারা পুকুর বা লালন পুকুর | • ২৫-৫০ শতাংশ, গভীরতা ৪-৫ ফুট
• ২-৩ সে.মি. আকারের পোনা ছেড়ে ১-২ মাস প্রতিপালন |
|
মজুদ পুকুর | • ২০ শতাংশ থেকে বড় যেকোন মাপের হতে পারে, গভীরতা ৪-৯ ফুট
• ৩-৪ ইঞ্চি পোনা ছেড়ে বড় মাছ উৎপন্ন |
যে বৈশিষ্টের উপর ভিত্তি করে শ্রেণীবিভাগ | পুকুরের প্রকার | বৈশিষ্ট্য |
পুকুরের আয়তনের উপর ভিত্তি করে | মিনি পুকুর | • ১-৫ শতাংশ
• উৎপাদনশীলতা বেশি |
মাঝারি পুকুর | • ১০-৩০ শতাংশ
• কার্প জাতীয় মাছের পোনা উৎপাদন পুকুর হিসেবে ব্যবহার করা যায়। |
|
বড় মজুদ পুকুর | • আয়তন ৩০ শতাংশের বেশি যেকোন মাপের
• কার্প জাতীয় মাছের মজুদ পুকুর |
আদর্শ পুকুরের বৈশিষ্ট্য
- পুকুর আয়তকার হবে।
- পুকুরে বকচর থাকবে।
- পানি ধারন ক্ষমতা থাকবে।
- চাষযোগ্য মাছ অনুযায়ী পানির গভীরতা থাকবে।
- আলো-বাতাসের প্রবাহ থাকবে।
- রাক্ষুসে মাছ ও ক্ষতিকারক প্রানি মুক্ত থাকবে।
- পরিমিত প্রাকৃতিক খাবার থাকবে।
- পানি দুষন মুক্ত থাকবে।
- পুকুরে পানি দেওয়ারর ভাল ব্যবস্তা থাকবে।
- পানি নিষ্কাশনের সু-ব্যবস্থা থাকবে।
- বড় গাছের ডাল পালা পুকুরে ছায়া দিবেনা।
- পুকুরের তলায় জৈব পদার্থের পরিমাণ ১-২% থাকবে।
- কাদার পরিমাণ ৪-৬ ইঞ্চি হওয়া বাঞ্চনীয়।
- পুকুর বসতবাড়ির কাছাকাছি হতে হবে।
- পুকুরের মাটি দো-আঁশ ধরনের হওয়াই সর্বোত্তম।
- পুকুরের তলা পঁচা কাঁদামুক্ত হতে হবে।
মাছ চাষের পুকুরের গুনাগন
বিষয় | উপযুক্ত পরিবেশ |
পানির বর্ণ | হালকা সবুজ |
পানির তাপমাত্রা | ২৫-৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস |
পানির স্বচ্ছতা | ১০-২০ সে. মি. |
আলো | ৬-৮ ঘন্টা আলোর ব্যবস্থা |
দ্রবীভূত অক্সিজেন | ৫-১০ পিপিএম |
দ্রবীভূত কার্বন ডাই অক্সাইড | <১-২ পিপিএম |
পানির পিএইচ | ৭.৫-৮.৫ |
লৌহ | <০.৫ পিপিএম |
ক্ষারকত্ব | ১০০-২০০ পিপিএম |
হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস | ০.০০০২ পিপিএম |
পানির ঘোলাত্ব | <২০০০০ পিপিএম |
পানির উপর শ্যাওলার স্তর | অনুপস্থিত |
পানির উপর লাল স্তর | অনুপস্থিত |
পুকুরের তলদেশের কাঁদা | <১৫ সে.মি. |
রোগজীবাণু | অনুপস্থিত |
জলজ উদ্ভিদ | অনুপস্থিত |
পুকুর পাড়ের ঝোপ-ঝাড় পরিষ্কার
- পুকুরের চারপাশে গাছপালা থাকার কারণে পর্যাপ্ত সূর্যালোকের অভাবে পুকুরে সার দেওয়া সত্বেও কাঙ্খিত পরিমাণ ফাইটোপ্লাঙ্কটন উৎপন্ন হয় না।
- ফাইটোপ্লাঙ্কটন না হলে পুকুরের ভিতরে অক্সিজেন এর ঘাটতি হয়।
- তাছাড়া ঝোপ-ঝাড় হতে পাতা পড়ে পানিতে বিষাক্ততা সৃষ্টি করে।
- প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য দৈনিক ৬-৮ ঘন্টা সূর্যালোক পড়া আবশ্যক।
পুকুরের তলার কাঁদা সরানো
- পুকুরের তলদেশের কাঁদা ১৫ সে.মি. এর কম হওয়া উচিত।
- পুকুরের উৎপাদনশীলতা নির্ভর করে পুকুরের তলদেশের মাটি বা কাঁদার গুনাগুনের উপর।
- কাঁদা বেশি হলে অধিক পরিমাণে জৈব পদার্থ থাকে ফলে পানিতে অধিক পরিমাণে কার্বন-ডাই অক্সাইড, মিথেন ও অন্যান্য বিষাক্ত গ্যাসের সৃষ্টি হয় যা মাছচাষের জন্য ক্ষতিকর।
পুকুরের তলদেশ শুকানো
- আগাছা দমন ও পুকুরের পাড় মেরামতকরণ ইত্যাদি সহজভাবে সম্পন্ন করা যায়।
- পুকুরের উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়।
- রাক্ষুসে ও অবাঞ্চিত মাছ, ক্ষতিকর পোকামাকড় এবং মাছের রোগজীবাণু দূর হয়।
- পুকুরের তলার বিষাক্ত গ্যাস দূর হয়।
শুকানো পুকুরের তলদেশ চাষ
- উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে পুকুর শুকানোর পর তলায় চাষ করে দিতে হয়।
- এর ফলে মাটির বাঁধন আলগা হবে, সূর্যালোক মাটির গভীরে প্রবেশ করবে।
- তলার মাটিতে বিদ্যমান রোগজীবাণু ও ক্ষতিকর পোকা মারা যাবে।
- মাটির গুনাগুন ভাল হবে।
- পুষ্টি উপাদান সহজলভ্য হবে।
পুকুর পাড় মেরামত
- পুকুরের পাড় ভাঙ্গা থাকলে তা অবশ্যই মেরামত করে নিতে হবে।
- পাড় মেরামত না করলে বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত কিংবা আকস্মিক বন্যার পানিতে পুকুরের পাড় ডুবে মাছ চলে যেতে পারে।
- বাহির হতে রাক্ষুসে মাছ ও দূষিত পানি প্রবেশ করতে পারে।
- দূষিত পানি প্রবেশের ফলে পুকুরের মাছ সহজেই রোগ ব্যাধি দ্বারা আক্রান্ত হয়।
আগাছা অপসারণ
- পুকুরে বিভিন্ন ধরনের জলজ আগাছা যেমন- কচুরিপানা, শাপলা, টোপাপানা, কলমিলতা, হেলেঞ্চা, ক্ষুদেপানা ইত্যাদি দেখা যায় যেগুলো পুকুরের পানিতে সূর্যালোক পড়তে ও বাতাস চলাচল করতে বাঁধার সৃষ্টি করে ফলে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরী ব্যহত হয়।
- এসব জলজ আগাছায় সাপ, ব্যাঙ আশ্রয় নেয়, রোগ জীবাণু ছড়ায় এবং মাছের চলাফেরায় অসুবিধার সৃষ্টি হয়। কাজেই এ সমস্ত জলজ আগাছা সম্পূর্ণভাবে অপসারণ/পরিষ্কার করতে হবে।
*** বিস্তারিত জানার জন্য আপনার নিকটস্থ উপজেলা মৎস্য দপ্তরে যোগাযোগ করুন।
Leave a Reply