১. পুকুর মৎস্যচাষ ঋণ কর্মসূচি
বিদ্যমান পুকুরে সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে মৎস্য চাষে উৎসাহিত করছে রাষ্ট্রয়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ – সোনালী ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক ও জনতা ব্যাংক।
ঋণ প্রাপ্তির যোগ্যতা: পুকুরের মালিক, ইজারাদার, যৌথ মালিকানাধীন পুকুরের অংশীদারগণ হতে আমমোক্তারনামা বা সম্মতিপত্র প্রাপ্ত অংশীদারগণ আবেদনের যোগ্যতা রাখে।
আবেদনপত্র দাখিল: আগ্রহী প্রার্থীগণকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শাখা থেকে বিনামূল্যে প্রাপ্ত আবেদনপত্র যথাযথভাবে পূরণের পর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কাছে দাখিল করতে হবে। পুকুরের কারিগরি সম্ভাব্যতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং সরেজমিনে পুকুর তদন্ত শেষে কারিগরি সম্ভাব্যতা সন্তোষজনক হলে ও মালিকানা যথাযথ মনে হলে আবেদনপত্রে সুপারিশসহ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শাখায় প্রেরণ করবেন।
ঋণ মঞ্জুর ও জামানত: প্রাপ্ত আবেদনপত্র এবং সংশ্লিষ্ট দলিলপত্রাদি ব্যাংক কর্তৃক পরীক্ষা করা হবে। প্রয়োজনে একক বা যৌথভাবে পুকুর পরিদর্শন করবেন। ঋণ মঞ্জুরির পর জামানত সংক্রান্ত ও অন্যান্য চুক্তিপত্র সম্পাদনান্তে ব্যাংক ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করবে।
সোনালী ব্যাংক এবং জনতা ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী মৎস্য ঋণের ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত কোনো সহায়ক জামানত প্রয়োজন হয় না।
৫০ হাজার টাকার উর্ধ্বে ঋণের জন্য পুকুর জামানত হিসাবে ব্যাংকের নিকট বন্ধক থাকবে।
সুদের হার: মৎস্য ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার বর্তমান সুদনীতি অনুযায়ি স্ব স্ব ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত হবে।
ঋণ পরিশোধের মেয়াদ: ১৮ মাস পর ঋণ পরিশোধ শুরু হবে এবং গ্রহীতা ৪টি সমান বার্ষিক কিস্তিতে সম্পূর্ণ ঋণ সুদসহ পরিশোধ করবেন।
২. মাছ চাষের জন্য ব্যাংকের নিজস্ব ঋণ ব্যবস্থা
মৎস্য চাষিগণের সহায়তা করার লক্ষ্যে ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ নিজেরাই মৎস্য চাষের সম্ভাব্যতা যাচাইপূর্বক ঋণের পরিমাণ, বিতরণ খাত, ঋণের মেয়াদ, পরিশোধের কিস্তি নির্ধারণ করে ঋণ বিতরণ করে থাকে।
সাধারণত যারা বেশি অংকের ঋণের জন্য আবেদন করেন তারা এই ক্যাটাগরির ঋণ পেয়ে থাকেন।
৩. সাধারণ ঋণ কর্মসূচির আওতায় পল্লী ঋণ
শিক্ষিত বেকার যুবক/যুব মহিলা এই কর্মসূচির আওতায় ঋণ পেয়ে থাকেন।
ঋণ প্রাপ্তির যোগ্যতা: মৎস্য চাষের উপর প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত শিক্ষিত বেকার যুবক/যুব মহিলা এই কর্মসূচির আওতায় ঋণ পেয়ে থাকেন। ঋণ গ্রহণের জন্য গ্রুপ গঠনের প্রয়োজন হবে। যে সমস্ত পুকুরে মাছ চাষ হচ্ছে না তা গ্রুপের নামে লীজ গ্রহণ করতে হবে।
ঋণ পরিশোধের মেয়াদ: ৫ বছর
ঋণ পরিশোধ পদ্ধতি: প্রতিবার মাছ আহরণকালীন সময়ে বিক্রিত মাছের মূল্যের ৫০% ঋণের হিসাবে জমা হবে যতদিন না সম্পূর্ণ ঋণ পরিশোধ হয়। বিক্রিত মাছের ৫০% টাকা গ্রুপ সদস্যরা ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতে পারবে। ব্যাংকের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পুকুরের মাছ ধরা এবং বিক্রয় হবে।
ব্যাংকভেদে বিদ্যমান ঋণসীমা ভিন্নতর।
কৃষি ব্যাংকের ঋণ কর্মসূচির খাতসমূহ ও ঋণের সর্বোচ্চ সীমাঃ
খাতসমূহ | বিদ্যমান ঋণসীমা | সুদের হার |
পুকুরে মৎস্য চাষ | বিঘা প্রতি ২১৩০০ টাকা | ৮% |
উপকূলীয় এলাকা স্বল্প মেয়াদী ঋণ কর্মসূচি | প্রতি ১০ একর চাষের জন্য ১.৮১ লক্ষ টাকা হতে ১.৮৬ লক্ষ টাকা | |
উন্নত পদ্ধতিতে গলদা চাষের ঋণ কর্মসূচি | একর প্রতি ৬০ হাজার টাকা | |
উন্নত সনাতন পদ্ধতি | একর প্রতি ৬০ হাজার টাকা | |
পুকুরে মধ্য মেয়াদি মাছের চাষ | মূলধন ব্যয় ৩৭ হাজার টাকা + বিভিন্ন মাছের প্রজাতির জন্য আলাদা নীতিমালা |
সোনালী ব্যাংকের ঋণ কর্মসূচির খাতসমূহ ও ঋণের সর্বোচ্চ সীমাঃ
খাতসমূহ | বিদ্যমান ঋণসীমা | সুদের হার |
পুকুরে মৎস্য চাষ | একর প্রতি ৭৫ হাজার টাকা | ৮% |
আধা নিবিড় পদ্ধতিতে মাছ চাষ | একর প্রতি ১৯৬,২০০ টাকা (১০ একরের জন্য) | |
হ্যাচারি: ১০০ কেজি কার্প জাতীয় মাছের রেণু উৎপাদনের জন্য | ৩৪০,৫১৫ টাকা | |
কার্প জাতীয় মাছের পোনা চাষ | এক একরের জন্য ৭৫,৮৮০ টাকা |
অগ্রণী ব্যাংকের ঋণ কর্মসূচির খাতসমূহ ও ঋণের সর্বোচ্চ সীমাঃ
খাতসমূহ | বিদ্যমান ঋণসীমা | সুদের হার |
পুকুরে মৎস্য চাষ (সর্বোচ্চ এক একর) | বিঘা প্রতি ১৫,০০০ টাকা | ৯-১০% |
পুকুর পুন:খনন | বিঘা প্রতি ২,২০০ টাকা | |
পানি নিষ্কাশন ও উপকরণ বাবদ | মোট ১৭,২০০ |
জনতা ব্যাংকের ঋণ কর্মসূচির খাতসমূহ ও ঋণের সর্বোচ্চ সীমাঃ
খাতসমূহ | বিদ্যমান ঋণসীমা | সুদের হার |
পুকুরে মৎস্য চাষ | একর প্রতি ১০,০০০ টাকা | ৯-১০% |
পুকুর সংস্কার | একর প্রতি ১০,০০০ টাকা | |
পুকুর প্রস্তুতি | একর প্রতি ১০,০০০ টাকা | |
পোনা ক্রয়, উপকরণ ও অন্যান্য ব্যয় | মোট ৫০,০০০ টাকা |
৪. মৎস্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে ঋণ প্রদান কর্মসূচি
ঋণ প্রাপ্তির যোগ্যতা: গ্রামীণ দরিদ্র চাষী, মৎস্যজীবী, শিক্ষিত বেকার যুবক, দুস্থ মহিলা, প্রান্তিক চাষী যাদের বাড়ির ভিটা ছাড়া ১ বিঘা জমি আছে এবং নিজস্ব অথবা ইজারা গ্রহণের মাধ্যমে পুকুরের মালিক এ ঋণ পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
ঋণের জামানত: কোন জামানত দিতে হয় না। তবে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার সাথে ১৫০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের উপর একটি চুক্তিনামা করতে হবে।
মৎস্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে ঋণ প্রদান কর্মসূচি
ঋণের পরিমান: একর প্রতি ৪০,০০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ১০০,০০০ টাকা ঋণ প্রদান করা হয়। তবে ছোট প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে।
সার্ভিস চার্জ: ঋণের আসল টাকার উপর ৫% হারে সার্ভিস চার্জ পরিশোধ করতে হবে।
*** বিস্তারিত জানার জন্য আপনার নিকটস্থ উপজেলা মৎস্য দপ্তরে যোগাযোগ করুন।
Leave a Reply